প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলায় মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই উপজেলার কোথাও কোথাও বাড়ছে আক্রান্তদের সংখ্যা। একই সাথে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের তালিকা। এই সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৪জন, যা মোট আক্রান্তের আনুপাতিক হিসেবে ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। যেখানে করোনায় দেশের মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, সেখানে দেশের চেয়েও বেশি বিয়ানীবাজার উপজেলায় মৃত্য ঘটছে।

বিয়ানীবাজার উপজেলায় সাম্প্রতিক সময়ে করোনা রোগীর সংখ্যা কেবল বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংক্রমণ হ্রাসের যেন কোনো লক্ষণ নেই। করোনায় আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যাও প্রতিদিনই বাড়ছে। শুধু পৌর এলাকায় নয়, বিভিন্ন ইউনিয়নেও করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ পৌরশহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে। করোনায় পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ কমে গেলেও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। মহামারি পরিস্থিতিতে এখানকার মানুষের মধ্যে নেই ভীতি, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। সবার চলাফেরা ও দৈনন্দিন কাজ যেন এখনো ভাবলেশহীন।

বিয়ানীবাজার উপজেলায় ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল এই উপজেলা প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এরপর থেক চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত করোনা শনাক্তে ২ হাজার ৫’শ ৭৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় সর্বমোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮১৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪৪জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৫৮৮জন রোগী। উপজেলায় করোনায় পরীক্ষা সাধারণ মানুষের ব্যাপক অনীহা রয়েছে। তবুও এই অঞ্চলের আক্রান্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং আক্রান্তের মধ্যে মারা যাওয়ার হার হচ্ছে ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এই হিসেবানুযায়ী নমুনা প্রদানকারীদের মধ্যে প্রতি তিনজনে একজন আক্রান্ত হয়েছেন এবং আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি ১৮ জনে একজন মারা গেছেন।

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীর জন্য স্থাপিত দশটি আইসোলেশন শয্যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত খালি পড়ে ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে হাসপাতালের আইসোলেশন শয্যাগুলো প্রায় পূর্ণ হওয়ার পথে। দশ শয্যার সব কয়টিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন করোনা রোগী। সর্বশেষ ৩১ জুলাই (শনিবার) উপসর্গযুক্ত একজন বৃদ্ধা আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাছাড়া ভর্তিরত রোগীদের মধ্যে প্রায়ই সবারই অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলায় সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক। এই অঞ্চলের মৃত্যুর হার দেশের সামগ্রিক মৃত্যুর হারের চেয়েও বেশি। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব, স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপদ দুরত্ব না মানা, উপসর্গযুক্তদের কোয়ারেন্টিন না মানা ইত্যাদি সংক্রমণ বাড়ার প্রধান কারণ বলে মনে করেন তিনি।

ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী আর বলেন, আমাদের আইসোশেন ওয়ার্ডে দশটি শয্যা রয়েছে। আমরা নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অক্সিজেন সাপোর্টসহ সবগুলো শয্যার রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সম্প্রতি ৭টি কনসেনট্রেটর পাওয়ায় করোনা রোগীদের সেবা প্রদানে সহযোগিতা হচ্ছে। আনুসাঙ্গিক চিকিৎসা সরঞ্জাম আরো যুক্ত হলে শয্যা আরো বাড়ানোর কথা জানান তিনি। পাশাপাশি সংক্রমণের উর্ধ্বগতিতে সংকট নিরসনে করোনা ইউনিটে শয্যা সংখ্যা বাড়াতেও আমরা চেষ্টা করছি।